ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং

বিশ্বায়নের এই যুগে ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। আর এ কারণে বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুরুত্ব। নিশ্চিত কর্মসংস্থানের একমাত্র এবং পরীক্ষিত মাধ্যম হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা। সারা বিশ্বে জেনারেল শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা বেশি জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ। বর্তমানে এই প্রতিযোগিতা পূর্ণ বিশ্বে যোগ্য ও কর্মদক্ষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। ধরা হয়ে থাকে, এসএসসি পাসের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় শিক্ষা জীবনের দিক নির্ধারণ করার সঠিক সময়।

ক্যারিয়ার হিসেবে কর্মমূখী/কারিগরি শিক্ষা বেছে নেয়াটা বর্তমানে খুবই নির্ভরযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারায় কর্মমূখী/কারিগরি শিক্ষার কর্মপরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। ফলে পেশা হিসেবে কর্মমূখী/কারিগরি শিক্ষা খুবই সমাদৃত এবং ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে চাকরির অভাব নেই। অভাব আছে দক্ষ ব্যক্তির। তাই পদশূন্য রেখে কম জনবল নিয়ে এগোচ্ছে আমাদের সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আর আমরা নিজেদের এই অদক্ষতাকে ঢাকতে চাকরি নেই বলে বেড়াচ্ছি। একটু খেয়াল করে দেখবেন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে অভিজ্ঞ তথা কাজ জানে, পারে, বোঝে এমন দক্ষ কর্মী চায়। কিন্তু আমাদের দেখুন, আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নিয়ে নামমাত্র সার্টিফকেট হাতে চাকরির সন্ধানে নেমে পড়ি। আর বরাবরের মতই চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে যাই। এরপর গালি দেই, ডিপ্লোমা যে কেন পড়ছিলাম ? মানছি, দোষ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার, আমাদের কারিগরি বোর্ডের। কিন্তু আমরাও সমান দোষে দোষী। কারণ, আমরা এর সমাধানের কোন চেষ্টাই করি না।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কিভাবে বাস্তব জীবনে সফল হতে পারবে, তার কিছু গাইডলাইন নিচে দেওয়া হলো, যা তোমার ঐ “কেন যে ডিপ্লোমা পড়ছিলাম” আক্ষেপ মুলক প্রশ্নের হাত থেকে রক্ষা করবে।

১. তুমি যে বিষয়ে পড়ছেন, সেই বিষয়ের ইংরেজী নামকরা লেখকের বইগুলো পড়ো, একটু নাড়াচাড়া করো।

২. গ্রুপ স্টাডি করো, সমস্যা বের করে তার সমাধান প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভাবে বের করার চেষ্টা করো।

৩. তোমার ডিপার্ট্মেন্ট এ ডিপার্ট্মেন্টাল বা সাবজেক্ট ভিত্তিক ক্লাব বানাতে পারো, দুই একজন ভাল শিক্ষককে সাথে নিতে পারো। আর যদি ক্লাব আগে থেকেই থাকে তবে ক্লাবে যোগ দিতে পারো।

৪. তোমার ক্যাম্পাসে কোন ডিভাইসের বা কোন ধরনের সমস্যা হলে তা যদি তোমার সাবজেক্টের দ্বারা সমাধান করা সম্ভব হয়, তবে ঐ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে পারো। বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে পারবে।

  • স্যারের সহায়তায় বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশনে অংশগ্রহন করতে পারো। স্যারদের রিচার্সেও সহায়তা করতে পারো।
  • ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল্গুলো পড়ার অভ্যাস করতে পারো। হাভার্ড, কেম্ব্রিজ এর ওপেন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট সলভ করলে দেখবে নিজের দক্ষতা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
  • বিভিন্ন দেশের সাইন্সফেয়ার, সহ নানা টেক ফেয়ারের প্রজেক্টগুলো নিয়ে গবেষণাও করতে পারো।
  • তোমার পড়া সাব্জেক্টের শেখা জ্ঞান থেকে নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করো, প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে হলেও চেষ্টা করতে হবে।

৫. তুমি যে বিষয়ে পড়ছো সে বিষয়ের কর্মক্ষেত্র গুলোতে সিভি/বায়োডাটা/রিজিউম ড্রপ করো বা আবেদনও করতে পারো, বিনা পয়সায় কাজ করে দেয়ার জন্য। প্রয়োজনে তুমি কিছু টাকা দাও ওদেরকে। এর মাধ্যমে তুমি তোমার সাবজেক্টের রিয়েল প্র্যাকটিস করতে পারবে ও প্রফেসনাল কাজ শিখতে পারবে। খবরদার, দু’তিন মাস পরে মাইনে বা বেতন চাইবে না। শিখতে থাকো প্রতিদিন বা সপ্তাহে তিন বা চার দিন করে। শিখতে শিখতে আর কোন নতুন শিখার কিছু পাচ্ছো না তখন ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আরো বড় প্রতিষ্ঠানে একইভাবে আবেদন করো কাজ শিখো। এভাবে দুই বা তিন বছর পার করো। ভুলেও এর মাঝে পার্ট টাইম ইনকামের জন্য লাফালাফি করবে না। কারণ, যারা ইনকাম করে তারা আর শিখতে পারে না। চতুর্থ বছরে পার্ট-টাইমের কাজের জন্য ঐ প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোথাও যোগ দিতে পারো। কাজ করতে থাকো, আর শিখতে থাকো।

৬. ইন্টার্নি বড় কোন প্রতিষ্ঠানে করতে হবে, তবে অবশ্যই সেটা যেন তোমার বিষয়ভিত্তিক হয়।

৭. ইণ্টার্নিতে অনেক সময় পাওয়া যায়, পড়া, কাজ এগূলোর চাপ কম থাকে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে তোমার উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলো। যেখানে যেখানে কাজ করছো, সেখানে সেখানে সব মানুষের সাথে ভাব জমাও তাদের কাজে সহয়তা করো। তুমি অ্যাডভান্স লেভেলের কাজ শিখতে পারবেন। জানার পরিধিও বাড়বে।

৮. ফুল টাইম কাজে ঝাপ দিন। তুমি তোমার সেলারি নিজেই নির্ধারণ করো আর ভাল প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করো। এখানেই তোমার সফলতার জীবন শুরু হল।

সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য উপরে উল্লেখ করা প্রতিটি পয়েন্ট মেনে চলার চেষ্টা করো। যখন তুমি পড়ছো, শিখছো – তখন তোমার অনেক বন্ধুকে দেখবে যে তারা ভাল বেতনের চাকরি করছে। আর তুমি শিখছো। চিন্তা করো না, তুমি যখন চাকরি করবে তখন দেখবে তাদের চেয়ে তুমি স্যালারি এতটাই বেশি হবে যে তুমি ঐ বন্ধু গুলোকে দু-থেকে তিন মাসেই পেছনে ফেলে অনেক উপরে চলে যাবে। কেননা, তোমার অভিজ্ঞতা আছে, আর অভিজ্ঞতাটার দামটা সব সময়ই অনেক বেশি।

তোমার এই সফলতায় মগ্ন হয়ে থাকলে হবে না, বি,এস,সি পড়ো ভালো ইউনিভার্সিটি থেকে। সময় তোমাকে সন্মান দেবে, জীবন হবে সফলতায় পূর্ণ। ভালো থাকো সুস্থ থাকো – সকল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উন্নতি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।