তোমার যতগুলো জামা আছে তার মধ্যে ২০% জামা আছে যা তুমি ৮০% সময় পরো। আবার একটি দোকানে যতগুলো পন্য আছে, তার মধ্যে ২০% পন্য এই রকম থাকে যা ৮০% সময় বিক্রয় হয়। তোমার ফেসবুকে যতগুলো ফ্রেন্ডস আছে, তাদের মধ্যে ২০% ফ্রেন্ডসদের সাথে তুমি ৮০% সময় চ্যাটিং করো।
আমি এতক্ষন যে কথা গুলো বললাম, এগুলো কি এর আগে তুমি কোন দিন খেয়াল করেছিলে? রিচার্ড কচের বই The 80/20 Principle পড়ার আগে আমিও কোন দিন এইগুলো এইভাবে খেয়াল করিনি। এই বিশেষ প্রিন্সিপ্যালটাকে প্যারেটো প্রিন্সিপ্যাল ও বলা হয়। সব থেকে বড় ব্যাপার, এই প্রিন্সিপ্যালটা লাইফের প্রায় সব ফিল্ডে কম বেশি প্রযোজ্য ।
এই প্রিন্সিপ্যালে বলা হয়েছে, সব সময় ৮০% রেজাল্ট আসে ২০% কজেজ (কারণ) থেকে, মানে তোমার খাতাতে যদি ১০০টি প্রশ্ন থাকে, তাহলে তার মধ্যে ২০টা প্রশ্ন এমন থাকবে, যার জন্য তুমি পরীক্ষায় ৮০% মার্কস পাবে। সোজা ভাষায়, ১০০টার মধ্যে ২০টা প্রশ্ন হলো গুরুত্বপূর্ণ।
এবার দেখা যাক এই প্রিন্সিপ্যালটাকে কিভাবে আমরা বেশি প্রোডাক্টিভ হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারি। আমি জীবনের তিনটা আলাদা আলাদা ফিল্ডে একটা করে এক্সাম্পল দিয়ে প্রিন্সিপ্যালটা ব্যবহারের পদ্ধতি বোঝানোর চেষ্টা করছি। যাতে তুমি নিজে তোমার জীবনের যে কোন ফিল্ডে এই প্রিন্সিপ্যাল অ্যাপ্লাই করে খুব কম কাজ করে অনেক বেশি অ্যাচিভ করতে পারো।
প্রথমেই দেখা যাক পড়াশোনার ক্ষেত্রে ৮০/২০ প্রিন্সিপ্যাল কিভাবে ব্যবহার করা যায়। যে কোন সাবজেক্টে তোমার বইয়ের যতগুলো প্রশ্ন আছে, তার মধ্যে ২০% প্রশ্ন এমন, যে গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানে পরীক্ষায় আশার সম্ভাবনা যে গুলর বেশি। যে গুলো থেকে তোমার ৮০% মার্কস আসবে।
তাই প্রথমে বুঝতে হবে ঐ ২০% প্রশ্ন কোন কোন গুলো। অনেক সময় গত বছরের প্রশ্ন গুলোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। তাহলে তোমাকে প্রথমে ঐ ২০% প্রশ্ন আলাদা আলাদা বেছে নিতে হবে, তারপর সেগুলোতে সব থেকে বেশি ইফোর্ট দিয়ে তৈরি হতে হবে। কারণ এই ২০% প্রশ্ন থেকেই তোমার ৮০% মার্কস আসতে চলেছে।
এর ফলে কি হবে, খুব অল্প পড়েও তুমি তোমার সেই বন্ধুদের থেকেও বেশি মার্কস পাবে, যারা ৮০/২০ প্রিন্সিপ্যালকে অ্যাপ্লাই না করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবে, আর বসে বসে সারাদিন গুরুত্বহীন প্রশ্ন গুলো পড়বে।
এবার দেখা যাক, বিজনেসের ক্ষেত্রে ৮০/২০ প্রিন্সিপ্যাল কিভাবে অ্যাপ্লাই করা যায়। ধরো তোমার একটা খেলনার দোকান আছে। তাহলে তোমার দোকানের সব খেলনার মধ্যে ২০% খেলনা এরকম হবে, যে গুলো বার বার বিক্রয় হবে। মানে যেটা থেকে তোমার ৮০% ইনকাম হবে। তাহলে এক্ষেত্রে তোমার উচিত হবে ঐ ২০% খেলনা গুলোকেই আরো বেশি করে কিনে এনে তোমার দোকানটাকে সাজিয়ে রাখা।
সহজ কথায় ঐ ২০% খেলনার উপরেই ৮০% ইনভেস্ট করা। কারণ এটা করলে তোমার মিনিমাম ইনভেস্টমেন্টে ম্যাক্সিমাম প্রফিট আসবে।
পড়াশোনা হলো, ব্যবসা হলো, এবার চলো দেখি রিলেশনশিপের ক্ষেত্রে ৮০/২০ প্রিন্সিপ্যাল কিভাবে অ্যাপ্লাই করা যায়।
তোমার যতগুলো বন্ধু আছে, তাদের মধ্যে ২০% বন্ধু এমন, যাদের সাথে সময় কাটাতে তোমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে। বা যারা তোমার যে কোন বিপদে সব সময় তোমার পাশে থাকে। এই ২০% বন্ধুকেই তোমার ৮০% সময় দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা কি করি? সব বন্ধু কে সমান গুরুত্ব, সমান সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। যা আলটিমেটলি আমাদের অনেকটা সময় অপচয় করাই।
কিন্তু তুমি যদি ৮০% সময় তোমার ঐ ২০% বন্ধুদের দাও, তাহলে তোমার অনেক সময় বাচবে, যে সময়ে তুমি আরো অনেক প্রোডাক্টিভ কিছু করতে পারবে। আর ঐ ২০% বন্ধুদের ৮০% সময় দেওয়াতে তাদের সাথে বন্ধুত্ব ও আরো বেশি গভির হবে।
তো মূল পদ্ধতিটা হলো দুটো স্টেপসের, একঃ যে ২০% থেকে ৮০% রেজাল্ট আসছে সেটাকে ফিগার আউট করা, আর দুইঃ ঐ ২০% এর পিছনেই নিজের ৮০% সময়, ইফোর্ট বা টাকা ইনভেস্ট করা।
আশাকরি এই ৮০/২০ প্রিন্সিপ্যাল থেকে তোমরা কিছু না কিছু শিখলে এবং চেষ্টা করবে তা নিজে অ্যাপ্লাই করতে।